ছুঁয়ে দেখা বৃষ্টি



তুমি নীল জল দেখতে চেয়েছিলে, সেদিন আমিও রাজি হয়েছিলাম তোমার পাশে দাঁড়িয়ে একটা আকাশ দেখবো বলে। তুমি রেডি হতে যখন দেরি করছিলে তখন আমার খুব রাগ হচ্ছিলো, ভাবছিলাম আসলে মেয়েদের নিয়ে কোথাও যাওয়াটা কতটা বিড়ম্বনা সৃষ্টি করতে পারে। ততক্ষণাত তোমার কক্ষের দরজাটি খোলার শব্দ আমার কানে লাগলো আমি কিছুটা খুশি যে অন্তত এখন রওনা হতে পারবো সে আসছে। কিন্তু তুমি যখন আরডি মার্কেটের ওভার ব্রীজের সামনে এসে দাঁড়ালে তখন তোমার চোখের দিকে তাকাতেই পৃথিবীর সমগ্র রাগ ভালোবাসায় রুপান্তরিত হয়ে গেলো। আমার বুঝতে বাকী রইল না যে আজকের বিকেলটি হতে যাচ্ছে আমার জীবনে সেরা প্রাপ্তিময় একটি বিকেল। যতটুকু মনে করতে পারছি আমি প্রায় ১ মিনিট অবিচল দৃষ্টিতে তাকিয়ে ছিলাম তোমার চোখ আর শাড়ীটার দিকে। তুমি চুলগুলোকে এমনভাবে রেখেছিলে যা কোনো ফ্যাশন নয় একটা স্টাইল হয়ে গিয়েছিল যে স্টাইলের উদ্ভাবক একমাত্র তুমিই। তোমার শাড়ী পড়ার ধরন আকৃষ্ট করতো যেকোনো পাশ্চাত্যরীতি অনুসৃত পুরুষকে। রাতের ঝলমলে আকাশের একটা ছোট্ট চাঁদ যেমন লক্ষ কোটি কিলোমিটার দূর থেকেও সমগ্র পৃথিবীকে আলোকিত করে তেমন কাজটাই করেছিল তোমার কপালের লাল টিপটা। তবে সেটা কোনো পার্থিবতাকে আলোকিত করেনি আলোকিত করেছিল আমার মনের পৃথিবীকে যার আয়তন মাপাটা নিতান্তপক্ষে বোকামি...!!
আমি তোমার হাতটি ধরে ওভার ব্রীজের ওখান থেকে রিক্সাশায় উঠে রওনা হলাম। আমরা যাচ্ছিলাম রাজশাহী চিড়িয়াখানাতে, চিড়িয়াখানার মূল ফটকের সামনে গিয়ে রিক্সাশা থেকে নেমে পড়ি। তখনো আমার হাতটা খুব সচেতন ভাবেই ধরে রেখেছিলো তোমার হাত, মনে হচ্ছিল যেন স্বর্গ সুখ স্পর্শ করছিল আমায়। আমরা দু-জন একসাথে পার্কে ডুকলাম, অনেক মানুষ কেউ এসেছে সময় কাটাতে, কেউ এসেছে প্রিয়জনকে এই ব্যস্ততম নগরীর মাঝে একটু শীতল ভালোবাসার ছোঁয়া দিতে, আবার কেউ এসেছে ব্যস্ততম রুটিনবাঁধা জীবনটাকে একটু স্বস্তি দিতে...!!
আমরা যখন প্রবেশ করি তখন বিকেলের সূর্যটা পশ্চিম গগনে নিস্তব্ধ হবার উকিঁ দিচ্ছে মাত্র। যদিও সেটা অপরিপক্ব ছিলো কিন্তু এর আলো মানুষকে নতুন করে বাঁচতে শেখাবে নিশ্চিত, হয়ত এই আলোটুকুই ভুলিয়ে দিতে পারে কারো প্রিয়জন কর্তৃক প্রাপ্ত এক টুকরো অভিমান। এই অপরিপক্ব গোধূলীর আভাটাই তার ভালোবাসাটকুকে প্রজ্বলিত করবে...!!
আমরা পার্কের ঠিক পশ্চিম দিকের একটা রেন্ট্রি গাছের নিচেই বসেছিলাম। তুমি ব্যস্ত ছিলে গাছপালা, বিশাল দিঘী আর পাখিদের সৌন্দর্য উপভোগ করাতে। তুমি অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে দেখছিলে একজোড়া লাল পদ্ম, যেন খুব আপন কারো জীবন বাসনায় এই অপলকতায় ছেদ ঘটাতে অক্ষম। তোমার নয়ন যুগল যখন লালপদ্ম ফুলের রহস্য উদঘাটনে ব্যস্ত আমার দৃষ্টি তখন তোমার নিষ্পাপ দুটি চোখে, কি যে নিষ্পাপতার ছোঁয়া আর মুগ্ধতা সেই চোখজোড়ায় তা আমার এই ক্ষুদ্র লেখনীতে প্রকাশ অসম্ভব। আশেপাশে কিছু পাখি স্বরুপে খেলছিল, কেউ বা রোদে পাখা মেলে বসে আছে কেউ বা সঙ্গী পাখিটির সাথে খুনসুটিতে ব্যস্ত। ঐ মুহুর্তে তোমার দিকে তাকিয়ে বারবার আমি হারিয়েছি নিজের অস্তিত্বকে, হারিয়েছি স্ব-ভালোবাসার নিয়ন্ত্রণ ক্ষমতাকে...!!
তোমার খোঁপাটা ছিল হিমালয়ের পেছন ফিরে ডাকা সৌন্দর্য শোভিত, যে কোনো বিলাসী পুরুষ দেখলেই কোমলতম সেই মুখখানা দেখার আখাঙ্কা চেপে রাখতে পারবেনা। আমিই সেই ভাগ্যবান পুরুষ যে কিনা এই নৈসর্গিক সৌন্দর্য উপভোগের একমাত্র অধিকার প্রাপ্ত ছিলাম। তোমার খোঁপায় একটা শিউলি মালা ছিল যার ঘ্রাণ মুগ্ধ করবে নেশাখোর কোনো পাখিকেও। তোমার শাড়ির ভাঁজ আমার লজ্জাকে আড়াল করে দিচ্ছিলো। তোমার গোলাপি রঙের ঠোঁট আমাকে মুহুর্তের মধ্যে বাস্তবতা ভুলিয়ে দিতো। গৌধূলী পেরিয়ে সন্ধ্যা হতেই আমরা মেসে আসার জন্য রওনা দিতে চাইলাম কিন্তু পরক্ষণেই শুরু হল বৃষ্টি। তোমার সৌন্দর্য আর বৃষ্টিমাখা প্রকৃতি মিলে সেদিন এক অচেনা স্বর্গের সাক্ষাত পেলাম। অত:পর বৃষ্টিতে ভিজে রিক্সাশায় উঠলাম। পরিশেষে একরাশ সুখময়-স্মৃতি নিয়ে মেসে ফেরা...!!
রচনাকালঃ
বঙ্গাব্দ: ৩০ পৌষ ১৪২৩
খ্রিষ্টাব্দ: ১৩ জানুয়ারি ২০১৭
রচনা-স্থান: রাজশাহী


মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

অ-প্রেরিত প্রেমের চিঠি-১

জীবনের সমীকরণ

বৃষ্টিস্নাত ক্যাম্পাস