প্রেরিত পত্র তামান্না

প্রিয়
মেহেদী স্যার

আপনি আমাদের জীবনে এসেছিলেন বসন্তের ঝোড়ো হাওয়ার মতোন। স্বাভাবিকভাবেই বস্তুহারা ছিল আমাদের জীবন। কোথায় যাব, কী করব ভেবে পাচ্ছিলাম না। তখন আপনি এলেন পথের দিশারী হয়ে। শীতের রুক্ষ প্রকৃতিতে আগমন ঘটল আপনার প্রস্ফুটিত ফুলের উপর নির্মল প্রজাপতিরূপে। যার চলন শান্ত ধীর, পবিত্র, গাম্ভীর্যপূণ।আপনি সেই প্রজাপতি যাকে শক্ত করেও ধরা যায় না আবার আলতো করেও ধরা যায় না, সে চলে যাবেই। কিন্তু আমরা বোধহয় আপনাকে একটু বেশি শক্ত করে ধরতে চেয়েছিলাম। তাই ফুলের ফৌঁটাটাও সম্পূর্ণ হতে দিলেন না। আমরা না হয় দোষী, পাপী, অপরাধী কিন্তু সেই ফুলটার কি দোষ ছিল যাকে আপনি অপূর্ণ রেখেই চলে গেলেন। মানছি স্যার সব ভালোকে বেশিক্ষণ কাছে রাখা যায় না। যেমন আমরা রাখতে পারি নি জাতির পিতাকে। কিন্তু তার সময়টাতোও এত অল্প ছিল না। বসন্তও তো প্রকৃতির কাছে কিছুদিন হার মেনেই থেকে যায়। রেখে যায় তার চলার চিহ্ন, তার আপন মহিমা। কিন্তু সেই বসন্তকে পূর্ণতা দানকারী প্রজাপতিটিকে প্রকৃতি কোন এত দ্রুত হারালো বলতে পারেন স্যার...?

প্রকৃতিও কখনো কখনো তাল হারিয়ে ফেলে। কেমন করে আবার যেনো তাল ফিরেও পায়। আপনিও আমাদের মাঝে এসেছিলেন সেই হারানো তাল হিসাবে। কিন্তু আমরা তো আর সেই প্রকৃতি নই স্যার, যে যখন তখন তালকে ফিরে পাব। আর পাব যে না তাও জানি। কিন্তু এত দ্রুত সেই তাল হারিয়ে ফেলব এটা কখনো ভাবি নি যেমন ভাবেনি সদ্য প্রস্ফুটিত ফুলটিও। থেকে থেকে একবার মনে হচ্ছে আপনার সাথে দেখা না হলেই বোধ হয় ভালো হতো। আপনি নিজেতো আগে আসেন নি তাহলে বিদায় বেলা কেন বিরহের ডাক নিয়ে এলেন স্যার? কেন জীবনকে নতুন ভাবে ভাবতে শেখালেন, কেনইবা স্বপ্ন দেখালেন ঢাবির? আবার কেনই বা যুদ্ধের ময়দান থেকে পলায়ন করছেন বাসুদেবের মতোন? কেন পাঞ্চালীকে একা রেখে চলে যাচ্ছেন রুকমীনির কাছে? এর পেছনেও কি কোন মহত্‍ উদ্দেশ্য আছে ?
আপনি প্রথম যেদিন আমাদের ক্লাসে এসেছিলেন সেই পুরোনো বাংলা বিভাগে ক্লাস এসেছিলেন সেই পুরোনো বাংলা বিভাগে ক্লাস নিতে সেদিন মেজাজ গরম হচ্ছিল স্যার। বাংলা না ইংরেজি ক্লাস করছিলাম তা বুঝতেই পারছিলাম না। অবশেষে আপনি মধুর কণ্ঠে বললেন " বনলতা সেনের " কবিতার প্রথম কয়েকটা লাইন, বুঝতে পারলাম আসলে আপনি কে? সেই প্রথম আপনার আবৃত্তি শুনে কাব্যরসের অমৃত সুধার সন্ধান পায় আর তার মাধ্যমেই আপনাকে এত কাছে পাওয়া। আর কিছু না হলেও রস শুষে নিতে পেরেছিলাম অনবদ্য আবৃত্তির মাঝে।থাক ওসব কথা। যানেন স্যার আমার মা আমাকে শিখিয়েছিল, দুঃখ তাড়ানো যায় না তাকে বরণ করে নিতে হয়। তখন কথটার মাধুর্য বুঝতাম না। কিন্তু অনেক কিছুর মতো আপনি আমাকে সেই কথাটার অর্থও কত সহজে বুঝিয়ে দিলেন। কারণ " আপনি তো আপনি " এই কয়টা দিনে আপনি আমাদের যা শিখিয়েছেন আমি এটা নিয়েই অনেক বড়দের সাথে এরই মধ্যে সমরেও লিপ্ত হয়েছি এবং জয়লাভও করেছি আর বিশ্বাস আছে এটাকেই পাথেয় করে অনেক দূরেও যেতে পারব। কিন্তু দুঃখ থাকবে সেই পথে আপনি থাকবেন না...!!
সবচেয়ে বড় কথা আপনি অবশ্যই এই BCS এর মাধ্যমে আপনার কাঙ্খিত লক্ষ্যে পৌঁছাতে পারেন যেন মহান সৃষ্টির্কতার নিকট আকুল আবেদন রইল। পরিশেষে আপনার সেই বিজয়ী জীবনের পথে আমাদের একেবারে দূরে সরিয়ে দিবেন না স্যার। কেবল এতটুকুই অনুরোধ আপনার কাছে। আমাদেরকে একেবারে পর করে দেবেন না স্যার, একটু জায়গা অনুপমের মতো আমাদের জন্যও রাখবেন আপনার কাছে। শুধু একটা কথাই জানি-------
" ওস্তাদ যদি শিষ্যরে একবিন্দু শেখায় কোনোদিন
নাই বস্তু দুনিয়াতে শোধাবে সে ঋণ "
আপনার স্নেহের ছাত্রী
তামান্না


মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

অ-প্রেরিত প্রেমের চিঠি-১

জীবনের সমীকরণ

বৃষ্টিস্নাত ক্যাম্পাস